Sunday, December 11, 2016

কিছু লোকের কাজ হলো, গণিতের অপপ্রয়োগ করে মানুষ চমকে দিএয় মজা নেওয়া। এ কাজ করতে গিয়ে ভুল কিছু হিসাব দেখিয়ে তাক লাগানোর চেষ্টা করা হয়। এমন একটি অপচেষ্টার মুখোশ খুলে দিচ্ছি।


আগে ভুলটাই দেখে নিই

ধরি, a-b = c
বা, (4a - 3a)  - 4b + 3b  = 4c - 3c  ; [b= -4b+3b লেখা যায়]
বা, 4a -3a -4b +3b = 4c -3c
পক্ষান্তর করে, 4a - 4b - 4c = 3a - 3b - 3c
বা, 4 (a-b-c) = 3 (a-b-c)
উভউপক্ষকে (a-b-c) দ্বারা ভাগ করে,
4 = 3 !!!

এখন কথা হলো গণিত তো মিথ্যা বলে না! কিন্তু চোখের সামনেই প্রমাণ! আসলে সমস্যাটি কোথায়?

সমস্যা হলো গণিত মিথ্যা বলেনি, বলেও না। আমরাই তাকে দিয়ে মিথ্যা বলিয়েছি।
নীচের সমাধান দেখার আগে নিজে একটু চেষ্টা করুন না!



সমাধানঃ
আমরা ০ দ্বারা কোন সংখ্যাকে ভাগ করতে পারি না। অথচ এই ভাগটা করেই আমরা ৪ আর ৩ কে সমান করেছি।

কারণ আমরা শুরুর লাইনেই ধরেছি a- b= c  ।
তাহলে a-b-c সমান দাঁড়ায় c - c = 0।

তাই যদি হয়, তাহলে উভয়পক্ষকে কীভাবে শুন্য দ্বারা ভাগ করব? বাস্তবেও কি আমরা কোনো কিছুকে শুন্য দিয়ে ভাগ করতে পারি? কোনো বস্তুকে শুন্য বার ভাগ করতে পারি? এটা একেবারেই অর্থহীন কথা।

কিন্তু এখানে তার চেয়ে বড় কথা যেহেতু  a-b-c =0, সেহেতু
4(a-b-c) = 3 (a-b-c) লাইনটি থেকে আমরা পাই
4×0 = 3×0
বা 0=0, যা সম্পূর্ণ সঠিক। এর পরে তো সামনে যাওয়ারই পথ থাকে না। প্রমাণ আর তাহলে কীভাবে হয়।

তাহলে, গণিত মিথ্যা বলে না আসলেই।

এখানে তো দেখলাম, ভুল জিনিসকেও আমরা অনেক সময় ভুল করে মেনে নিয়ে ফেলতে পারি। উল্টোটাও ঘটে অনেক সময়। যেমন ০.৯৯৯... = ১ (প্রায় নয়, এক্কেবারে) সঠিক হওয়া সত্ত্বেও আমরা প্রথমে মেনে নিতে আপত্তি করি।

আপনারও আপত্তি আছে?

তাহলে পড়ুন:
☛ আপনি মানুন আর নাই মানুন ০.৯৯৯... = ১
Category: articles

Sunday, December 4, 2016

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অধিকাংশ ঘটনার পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে একটি মজার ব্যাপার চোখে পড়বে। যেমন আপনি যদি কোনো ক্লাসের ছাত্রদের প্রাপ্ত নম্বরের দিকে খেয়াল করেন, তবে দেখা যাবে অনেক বেশি মার্ক পেয়েছে এমন ছাত্রের সংখ্যা খুব কম। আবার খুব কম মার্ক পেয়েছে এমন ছাত্রের সংখ্যাও খুব কম। তবে মোটামুটি মার্ক পাওয়া ছাত্রদের সংখ্যা অনেক বেশি। কোনো একটি পরিসংখ্যান থেকে পাওয়া এমন চিত্রকে গ্রাফের মাধ্যমে তুলে ধরলে যে অকৃতি পাওয়া যায় তার নামই বেল কার্ভ (bell curve)।

বেল কার্ভ

পরিসংখ্যানের পরিভাষায় নাম পরিমিত বিন্যাস (normal distribution)। আকৃতি বেল বা ঘণ্টার মতো বলেই এর এমন নাম হয়েছে। তবে পরিসংখ্যানের দৃষ্টিতে আসলে এটি একটি সম্ভাবনা বিন্যাস (probability distribution) ।

পরিসংখ্যানে এরকম অনেকগুলো সম্ভাবনা বিন্যাস রয়েছে। তবে এদের মধ্যে সবচেয়ে কারিশমা দেখাতে সক্ষম এই বেল কার্ভ। এমনকি বিভিন্ন পরিস্থিতিতে অন্যান্য কিছু কিছু বিন্যাসও আচরণ করে এর মতো। এই বেল কার্ভের জাদু দেখানোর অন্যতম একটি হাতিয়ার হল ৬৮-৯৫-৯৯ নিয়ম। এই নিয়মের জাদু দেখার আগে একটু জানা দরকার পরিমিত ব্যবধান (standard deviation) কাকে বলে।

মনে করুন, আপনার কাছে একটি নমুনা (sample) আছে, যাতে একটি ক্লাসের ৫ জন ছাত্রের প্রাপ্ত নম্বর দেখা যাচ্ছে। ধরুন নম্বরগুলো হল (২০ এর মধ্যে) ১৪, ১৫, ১৩, ১৪, ১৫। ধরুন, আরেকবার একটি নমুনা নিয়ে পাওয়া নম্বরগুলো হল ৯, ১৬, ১৯, ৭, ১৪। প্রথম নমুনায় নম্বরগুলো খুব কাছাকাছি। এদের গড় হল ১৪.২। নম্বরগুলো গড়ের খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে। এক্ষেত্রে আমরা বলব এদের পরিমিত ব্যবধান কম।

পরের নমুনার নম্বরগুলো অনেক বেশি ছড়িয়ে আছে। এদের গড় হল ১৩। এ নম্বরগুলো গড় থেকে অনেক বেশি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। অতএব এদের পরিমিতি ব্যবধান বেশি। তার মানে যে উপাত্ত যত বেশি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে তার পরিমিতি ব্যবধান তত বেশি।

ধরুন, উপরের প্রথম নমুনার যে মূল উপাত্ত থেকে পাওয়া গেছে পরিমিত ব্যবধান ১। আমরা আগেইে দেখেছি এদের গড় ১৪.২। এখন গড় থেকে ১ যোগ ও বিয়োগ করে পাই (১৩.২, ১৫.২)। 

৬৮-৯৫-৯৯ নিয়ম বলছে যে এই উপাত্তের প্রায় ৬৮ শতাংশ ছাত্রের নম্বর ১৩.২ থেকে ১৫.২ এর মধ্যে থাকবে। একইভাবে ২ (পরিমিত ব্যবধান) যোগ- বিয়োগ করে আমরা বলতে পারব, প্রায় ৯৫ শতাংশ ছাত্রের নম্বর থাকবে ১২. ২ থেকে ১৬.২ এর মধ্যে। পরিমিত ব্যবধান ৩ হলে আমরা বলতে পারব, প্রায় ৯৯ শতাংশ ছাত্রের নম্বর থাকবে ১১.২ থেকে ১৭.২ এর মধ্যে।

বেল কার্ভের নিয়ম। $\mu$ হলো গড়, আর $\sigma$ হলো পরিমিত ব্যবধান। 

আমাদের ধরে নেওয়া নমুনা ছোট্ট ছিল বলে এই ফলাফলকে গুরুত্বহীনও মনে হতে পারে। কিন্তু ধরুন আপনার কাছে আছে দশ হাজার ছাত্রের নম্বর, যেখানে গড় হলো ৭৫ ও পরিমিতি ব্যবধান ২। তাহলে নম্বরগুলো ঠিক কত ছিল তা না জেনেও আপনি বলতে পারবেন, প্রায় ৬৮ শতাংশ ছাত্র নম্বর পেয়েছে ৭৪ থেকে ৭৬ এর মধ্যে। একইভাবে প্রায় ৯৫ শতাংশ ছাত্র নস্বর পেয়েছে ৭৩ থেকে ৭৭ এর মধ্যে। আর প্রায় ৯৯ শতাংশ ছাত্রই নম্বর পেয়েছে ৭২ থেকে ৭৮ এর মধ্যে। 

দারুণ, তাই না!

শুধু গড় দেখে আপনি যদি বলে ফেলতেন যে ছাত্রদের ফলাফল খুব ভালো, কী ভুলটাই না করতেন! দেখুন ৯৯ শতাংশের মধ্যেও কেউ ৮০ পায়নি। দেশের শিক্ষা নীতি প্রনয়ণে কি কাজেই না আসবে এই পরিমিত বিন্যাস! শুধু কি তাই? পরিমিত বিন্যাস মেনে চলে এমন যে কোনো উপাত্ত থেকেই আপনি দারুণ সব সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তাহলে চলুন দেখে নিই আর কোন ধরনের উপাত্ত মেনে চলে এই জাদুর বিন্যাসটি।

মনে করুন আপনি একজন প্রকৌশলী। একটি শিল্প- কারখানায় প্রস্তুতকৃত বল্টুর দৈর্ঘ্য ঠিক আছে কি না জানতে চান। সেখানে বল্টুর একটি বড় সড় নমুনা নিয়ে গড় ও পরিমিত ব্যবধান দিয়ে হিসাব করে দেখবেন কত শতাংশ বল্টু আপনার নিয়ন্ত্রিত মাত্রার মধ্যে আছে। এটা করা যাবে কারণ বিভিন্ন পরিমাপের উপাত্ত মেনে চলে পরিমিত বিন্যাস।

একইভাবে মানুষের উচ্চতা, বয়স, ওজোন ইত্যাদি মেনে চলে এই বিন্যাস। পদার্থবিদ্যার জগতেও বেল কার্ভ সরবে নাক গলায়। জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল দেখান যে এক ধরনের দোলকের সম্ভাবনা ফাংশন এবং ব্যাপন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন কণার অবস্থান বের করা যায় বেল কার্ভ দিয়ে। জীববিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন টিস্যুর দৈর্ঘ্য, উচ্চতা, ক্ষেত্রফল ও ওজোন মেনে চলে পরিমিত বিন্যাস। এছাড়াও বিভিন্ন প্রাণীর চুল, নখ, দাঁত ও নখরের দৈর্ঘ্যের ক্ষেত্রেও বলা চলে একই কথা। এমনকি মানুষের রক্ত চাপসহ বিভিন্ন শারীরিক পরিমাপ মেনে চলে এই বিন্যাস। কোনো বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার পরিমাপের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বার যে ভুলগুলো হবে তাও মেনে চলে বেল কার্ভ। আসলে এর প্রয়োগ বলে শেষ করা সম্ভব নয়।

এর আরও কয়েকটি দারুণ বৈশিষ্ট্য আছে।

১। এটি একটি প্রতিসম বিন্যাস। ফলে অর্ধেক মান থাকবে গড়ের ওপরে এবং অর্ধেক নিচে। আবার গড় থেকে ১ বা ২ পরিমিত ব্যবধানের ওপরে যে পরিমাণ উপাত্ত থাকবে, তার নিচেরে দিকেও প্রায় সমান পরিমাণ উপাত্ত থাকবে। পরিসংখ্যানের কাজই হল অনিশ্চিত অবস্থায় সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করা। এই কাজে বেল কার্ভের এই ধর্মও বেশ কাজে আসে।

২। কোনো উপাত্ত যদি বেল কার্ভের মতো বিন্যাস মেনে না চলে তবে অনেক ক্ষেত্রেই সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো আপনি যে কোনো বিন্যাসের উপাত্তগুলো গড় নিন। নমুনার সাইজ যদি বড় হয় তবে দেখা যাবে এই গড়গুলো ঠিকই বেল কার্ভের মতো হচ্ছে। ফলে অনিশ্চিত অবস্থায়ও মেঘ কেটে যাচ্ছে।

৩। এছাড়াও নমুনা বড় হলে অনেক বিন্যাসই সরাসরি বেল কার্ভের মতো হয়ে যায়। গড় নিতে হয় না।

বেল কার্ভের ইতিহাস:

কেউ কেউ বেল কার্ভের আবিষ্কারের জন্যে ডি ময়ভারকে কৃতিত্ব দেন। ডি ময়ভার ১৭৩৮ সালে যে কথাগুলো প্রকাশ করেছিলেন তাতে অস্পষ্টভাবে পরিমিত বিন্যাসের কথা ছিল ঠিকই, কিন্তু তিনি তাঁর নিজেরই সম্ভাবনার বিন্যাস সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা ছিল না। ১৮০৯ সালে কার্ল ফ্রেডরিখ গাউস পরিসংখ্যানের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ধারণা প্রকাশ করেন। এতে ছিল পরিমিত বিন্যাসের কথাও। আর তাই বেল কার্ভ বা পরিমিত বিন্যাসের অপর নাম গাউসিয়ান বিন্যাস।

তাঁর পরে বিন্যাসটিতে বড় অবদান রাখেন পিয়েরে ল্যাপ্লাস। অন্যান্য অবদানের মধ্যে তিনি প্রমাণ করেন যে নমুনার সাইজ বড় হলে যে কোনো সম্ভাবনা বিন্যাসের গড় বেল কার্ভের মতো হবে। এই সূত্রকে বলা হয় কেন্দ্রীয় সীমা উপপাদ্য (Central limit theorem)।

এছাড়াও এতে বিভিন্নভাবে অবদান রেখেছিলেন ম্যাক্সওয়েল, অ্যাবে ও অ্যাড্রেইন। এমনকি গ্যালিলিও ও এতে খানিকটা অবদান রাখেন। যদিও সে সময় বেল কার্ভের ধারণার প্রচলন ঘটেনি। তিনি দেখিয়েছিলেন যে কোনো পরিমাপের ভুলগুলোর পরিমাণ বেল কার্ভের মতো দেখায়।

নোট:
পরিমিত ব্যবধানকে সাধারণত গ্রিক বর্ণ σ দ্বারা প্রকাশ করা হয়। তবে নমুনা থেকে বের করলে σ এর বদলে ল্যাটিন বর্ণ s লেখা হয়। এর সূত্র হল:

$$\sigma = \sqrt{\frac{\sum_{i=1}^N(x_i-\mu)^2}{N}}$$

যেখানে, $\mu$ হলো গড়। N হলো মোট কয়টি মানের সংখ্যা।

সূত্র:
১। অ্যাবাউট ডট কম
২। উইকিপিডিয়া
Category: articles

Sunday, September 25, 2016

[লেখাটি এর আগে পাই জিরো টু ইনফিনিটি ম্যাগাজিনের জানুয়ারি, ২০১৪ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল]

যদিও বাঁধাধরা নিয়ম মানতে আমাদের ভালো লাগে না, তবু নিয়মের মাঝেই রয়েছে গঠনমূলক ফলাফল। আমরা এখানে দেখব ২ থেকে ১১ পর্যন্ত সংখ্যাগুলো দ্বারা  কোন সংখ্যাগুলো বিভাজ্য। আর এই নিয়মটির কাছে হার মানবে TI-89 গ্রাফিক ক্যালকুলেটরসহ বিভিন্ন অনলাইন ক্যালকুলেটর। এমনকি আপনার ক্যালকুলেটরও হার মানতে পারে। একটা ভাগ করেই দেখুন না।

12, 347, 496, 132 কে 11 দিয়ে! আপনার ডিভাইস যদি সংখ্যাটিকে 11 দ্বারা বিভাজ্য দেখায়, তবে ক্যালকুলেটরটি ভুল! কারণ এতে রাউন্ডিং করা হয়েছে, মানে আসন্নীকৃত মান প্রদর্শিত হয়েছে। প্রকৃত ভাগফল হবে 1122499648 দশমিক 3636...36...।


এবার মূল আলোচনায় আসি

বিঃদ্রঃ আলোচনায় বিভাজ্য বলতে নিঃশেষে বিভাজ্য বোঝানো হয়েছে।

২ দ্বারা বিভাজ্য:
আমরা সবাই জানি যে কোনো জোড় সংখ্যাই ২ দ্বারা বিভাজ্য। যেমন, ২, ৮, ১১৪, ৪৩২৫৬ ইত্যাদি।

৩ দ্বারা বিভাজ্য:
কোনো সংখ্যার অঙ্কগুলোর যোগফল যদি ৩ দ্বারা বিভাজ্য হয়, তাহলে সংখ্যাটিও ৩ দ্বারা বিভাজ্য হবে। যেমন ১৪১ এর ক্ষেত্রে ১+৪+১=৬, যা ৩ দ্বারা বিভাজ্য। তাই ১৪১ সংখ্যাটি ৩ দ্বারা বিভাজ্য। কিন্তু যেমন ধরুন ২৩৮ এর ক্ষেত্রে ২+৩+৮=১৩, যা ৩ দ্বারা বিভাজ্য নয়, সুতরাং ২৩৮ তিন দ্বারা অবিভাজ্য। অঙ্কগুলোর যোগফল বেশি বড় হয়ে গেলে (যদি যোগফল দেখে একবারে বোঝা না যায়) যোগফলের জন্যই নিয়মটি আবারও প্রয়োগ করুন।

৪ দ্বারা বিভাজ্যতা:
কোনো সংখ্যার দশক ও এককের ঘরের অঙ্ক নিয়ে গঠিত সংখ্যা ৪ দিয়ে বিভাজ্য হলে সংখ্যাটিও ৪ দ্বারা বিভাজ্য হবে। যেমন ১১৬ এর ক্ষেত্রে ১৬, যা ৪ দিয়ে বিভাজ্য। তাই ১১৬ও ৪ দিয়ে বিভাজ্য। আবার ৫৬০ এর ৬০ যেহেতু ৪ দিয়ে বিভাজ্য, তাই ৫৬০ ও বিভাজ্য।

৫ দ্বারা বিভাজ্যতা:
এটাও আমরা সবাই ভালো করেই জানি এবং কাজে লাগাই। সংখ্যার এককের ঘরের অঙ্ক ০ বা ৫ হলে সেই সংখ্যা ৫ দ্বারা বিভাজ্য। যেমন, ১০৫, ৩০৬০, ৯৬৫ ইত্যাদি।

৬ দ্বারা বিভাজ্যতা: ৬ সংখ্যাটি ২ এবং ৩ এর গুণফল। তাই যে সংখ্যা ২ ও ৩ উভয় সংখ্যা দ্বারা বিভাজ্য হবে, সেটাই ৬ দ্বারা বিভাজ্য হবে। আরো সহজ করে বললে, সংখ্যাটি হবে জোড় এবং অঙ্কগুলোর যোগফল তিন দ্বারা বিভাজ্য হবে। জোড় না হলেই বাদ! জোড় হলেই শুধু তিন এর পরীক্ষা

ব্যাস!

যেমন, ১২০ একটি জোড় সংখ্য এবং তিন দ্বারা বিভাজ্য (কারণ ১+২+০ = ৩)। তাই ১২০ ছয় দ্বারা বিভাজ্য। একইভাবে, ৭৮০ জোড় সংখ্যা এবং ৭+৮+০=১৫, যা ৩ দ্বারা বিভাজ্য, তাই ৭৮০ ছয় দ্বারা বিভাজ্য।

৭ দ্বারা বিভাজ্যতা:
এককের অঙ্ককে বর্গ করে সংখ্যাটির বাকি অংশ থেকে বিয়োগ দিন। ভাগফল ৭ দ্বারা ভাগযোগ্য হলেই কেল্লাফতে!!!

যেমন, ৬৭২ হলে ৬৭-৪=৬৩। সুতরাং $\frac{৬৩}{৭} = ৯।

ইউরেকা! সংখ্যাটি বড় হলে একই প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি করা যাবে।

যেমন,  ৪৫১৭৮ হলে ৪৫১৭ - ৬৪ = ৪৪৫৩।
আবার ৪৪৫ - ৯ = ৪৩৬, পুনরায় ৪৩-৩৬ = ৭ যা কাঙ্খিত।

তাই কেল্লাফতে!!!

৮ দ্বারা বিভাজ্যতা: কোনো সংখ্যার সর্বশেষ তিন অঙ্কের সমন্বয়, মানে শতক, দশক ও এককের অঙ্কের সমন্বয় যদি ৮ দ্বারা বিভাজ্য হয়, তাহলে ঐ সংখ্যাটি ৮ দ্বারা বিভাজ্য হয়।
যেমন ৯,৬৪০ আট দ্বারা বিভাজ্য কারণ $\frac{৬৪০}{৮} = ৮০।

তবে এ প্রক্রিয়া ঝামেলাপূর্ণ মনে হতে পারে। কিন্তু ,মনে করুন আপনার কাছে আছে একটি বিশাল সংখ্যা 20,233,322,496। এখন 496 কেই 8 দ্বারা ভাগ দিলেই আপনি বুঝে ফেলবেন রহস্য!

৯ দ্বারা বিভাজ্যতা: তিন এর নিয়মের মতোই অঙ্কগুলোর যোগফল ৯ দ্বারা বিভাজ্য হতে হবে। যেমন ৭,২১৮ এর জন্য ৭+২+১+৮ = ১৮, যা ৯ দিয়ে ভাগযোগ্য।

১০,০০৬,৪৭০ এর জন্য ১+৬+৪+৭=১৮, ফলে এটি ৯ দ্বারা বিভাজ্য হতে বাধ্য।

১০ দ্বারা বিভাজ্যতা: এটাও সবার জানা। মানে এককের ঘরে শূন্য (0) থাকতে হবে।

তবুও নিরস উদাহরণ দিচ্ছি- ১১০, ৭৬০, ১০০৩৭৭৩০ ইত্যাদি।

১১ দ্বারা বিভাজ্যতা: ১১ এর পরীক্ষায় পাস করতে হলে সংখ্যাটির একটার পর একটা পর্যায়ক্রমিক সংখ্যার যোগফল ও বাকী সংখ্যাগুলোর যোগফলের পার্থক্য ১১ দ্বারা বিভাজ্য হতে হবে।
উদাহরণ দেখলে বুঝতে আরেকটু সহজ হবে।

যেমন, ১০৮২৪ এর জন্যে (১+৮+৪) - (০+২) = ১৩ - ২ = ১১।
ফলে, ১০,৮২৪ এগারো দিয়ে বিভাজ্য।

একইভাবে ২৫, ৭৮৪ এর ক্ষেত্রে (২+৭+৪) - ( ৫+৮) = ১৩ - ১৩ = ০ ।

আর ০ ও তো ১১ দিয়ে ভাগ যায় (০ বার!!!)।


এবার তাহলে আলোচনা শুরুর সংখ্যাটির ময়নাতদন্ত করে ফেলি!

সংখ্যাটি হলো 12,347,496,132। সুতরাং (১+৩+৭+৯+১+২) - (২+৪+৪+৬+৩) = ২৩-১৯ = ৪ হয়, মানে ১১ দ্বারা অবিভাজ্য।

দেখা যাচ্ছে এ প্রক্রিয়াটির কাছে যন্ত্র পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করেছে!

সূত্র:
১. উহকিপিডিয়া -Division algorithm
২. http://www.mathwarehouse.com/arithmetic/numbers/divisibility-rules-and-tests.php
৩. http://www.mathsisfun.com/divisibility-rules.html

৫০ এর ছোট সব মৌলিক সংখ্যার পরীক্ষা চালাতে এ লিঙ্কে যান। 
Category: articles

Tuesday, September 20, 2016

(লেখাটি এর আগে পাই জিরো টু ইনফিনিটি ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়)
একবার রাণী ক্যাথেরিনের রাজসভায় দাওয়াত পেয়ে ফ্রেঞ্চ দার্শনিক ডেনিস ডিডেরট তার নাস্তিকপন্থী মনোভাবের জোর প্রচার শুরু করেন। কোন উপায় না দেখে রাণী অয়লারকে ডেকে পাঠান। অয়লার সাহেব এসে ডেনিস সাহেবের সাথে ধর্মীয় আলোচনায় যুক্ত হলেন। অয়লার এক পর্যায়ে বললেন তিনি ঈশ্বরের অস্তিত্বের একটি বীজগাণিতিক প্রমাণ দেখাবেন। ডি মরগানের ভাষ্য মতে ডেনিস সাহেব রাজী হলেন এবং অয়লার পরিপূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললেন,
"স্যার, যেহেতু $e ^{i \pi} + 1 = 0$; অতএব ঈশ্বর আছেন।"
রাজসভার সবাইকে হাসার সুযোগ করে দিয়ে গণিতে অপক্ক ডেনিস সাহেব সাথে সাথে প্রস্থান করেন।

এই একটি সমীকরণ গণিতের চারটি শাখার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে। e এর আবির্ভাব ক্যালকুলাস থেকে, π আসে জ্যামিতি থেকে, i এর পদচারণা জটিল সংখ্যার জগতে আর ০ ও ১ এর ব্যবহার পাটিগণিতে। অয়লার মনে করতেন গণিতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি সংখ্যার এই সম্পর্ক কোনো কাকতালীয় ব্যাপার হতেই পারে না। অতএব ঈশ্বর অবশ্যই আছেন আর তিনিই এই সম্পর্ক গড়েছেন।

এই সংখ্যাগুলো আসলেই একটু স্পেশাল।
এখানে,
e = ন্যাচারাল লগারিদমের ভিত্তি।
π = বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের নির্দিষ্ট অনুপাত
i = কাল্পনিক সংখ্যার একক যার মান √ (-1)
০ = যোগজ অভেদ (Additive Identity)
১ = গুনজ অভেদ (Multiplicative Identity)
এগুলো কেন বিশেষ সংখ্যা তা একটু বলে নেই।

e (অয়লারের সংখ্যা):

গণিতের অন্যতম প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ একটি অমূলদ ধ্রুবক হল অয়লারের সংখ্যা e। এই e হল স্বাভাবিক লগারিদমের ভিত্তি। অর্থ্যাৎ আমরা যাকে লন বা ln বলি (Natural Logarithm) সেটা আসলে loge। এর কাছাকাছি মান হল 2.71828। এটাকে এভাবেও লেখা যায়-

e =  \displaystyle\sum\limits_{n = 0}^{ \infty} \dfrac{1}{n!} = 1 + \frac{1}{1} + \frac{1}{1\cdot 2} + \frac{1}{1\cdot 2\cdot 3} + \cdots

সুইশ গণিতবিদ লিওনার্দ অয়লারের নামে একে e বলা হলেও লগারিদমের আলোচনা করতে গিয়ে জন নেপিয়ার প্রথম e এর ধারণা দিয়েছেন। তাই একে নেপিয়ারের ধ্রুবকও বলা হয়।  এই e কোন র‍্যানডম নাম্বার নয়। ইতিহাসবিদদের মতে, সত্যিকার অর্থে ধ্রুবকটি বের করেছেন কোন বণিক বা ব্যাংকার। কারণ, সংখ্যাটির চক্রবৃদ্ধি সুদের সাথে সম্পর্ক রয়েছে। আরো সূক্ষ্মভাবে বললে, একক প্রাথমিক পরিমাণ থেকে চক্রবৃদ্ধিতে ১০০% হারে এবং অসীম সংখ্যক সময়কালে বর্ধনশীল যেকোনো বৃদ্ধির সর্বোচ্চ মান হতে পারে এই সংখ্যা।

সেমন ধরুন, কোনো পণ্যের দাম ছিল ১ টাকা। ১০০% বৃদ্ধিতে ১ বছরে এর দাম হবে ২ টাকা। [চক্রবৃদ্ধির সূত্রানুযায়ী]
এখন, হার ১০০% ই রেখে একে দুই সময়কালে ভাগ করে নিয়ে প্রতি ছয় মাস পর ৫০% করে বাড়ালে বছর শেষে দাম দাঁড়াবে ২.২৫ টাকা। অর্থ্যাৎ, কিছুটা বেশি । এভাবে সময়কালকে আরো খণ্ডিত করতে থাকলে বছর শেষে পরিমাণও বাড়তে থাকে। কিন্তু যতই বাড়ে ততই বাড়ার হার কমে অর্থ্যাৎ আগের বার তার আগের বারের চেয়ে যতটুকু বেড়েছিল এবার গত বারের চেয়ে তার চেয়ে কম পরিমাণ বেড়েছে। এটা ঠিক যেন মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ নীতির বিপরীত যেখানে গ্যালাক্সিরা যতই দূরে সরে, ততই সরে যাবার বেগ বেড়ে যায়।

এখন, এই ক্ষেত্রে প্রথম দিকে অধিক খণ্ডায়ানের প্রতিক্রিয়া বেশি হলেও ধীরে ধীরে এ প্রভাব কমতে কমতে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যার কাছকাছি আবর্তিত হয়। সেই সংখ্যাটিই হল 2.718 281 828......, অমূলদ ধ্রুবক।
চক্রবৃদ্ধির সাথে সম্পর্ক থাকার বদৌলতেই ধ্রুবকটি প্রথম কোনো গণিতবিদের হাতে আবিষ্কৃত না হয়ে হয়েছিল ব্যাংকারের হাতে।


পাই(π) 

যে কোনো বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত একটি ধ্রুবক সংখ্যা (π)- এ জ্ঞান চার হাজার বছর প্রাচীন। দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য এত ন্যাচারাল ও নিরীহ এই ধ্রুবকটিকে দেখলেই এখনও স্কুলপড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থী ভয় পায়।  ব্যাবীলনীয় ও মিশরীয়রা ছাড়া আর্কিমিডিস ও চীনের যু চংজি সহ অনেক বিখ্যাত গণিতবিদের গবেষণার খোরাক ছিল এই পাই। অবশেষে ১৭০৬ সালে উইলিয়াম জোন্স পাইকে প্রকাশের জন্য π চিহ্নের প্রস্তাব করেন যাকে ১৭৩৭ সালে কাজে লাগিয়ে বিখ্যাত করেন লিওনার্দ অয়লার। ফ্রেঞ্চ গণিতবিদ জর্জ বুফন সম্ভাব্যতা দিয়ে পাই এর মান বের করার সূত্র বের করেন।

কাল্পনিক সংখ্যার প্রতীক (i):

i হচ্ছে কাল্পনিক সংখ্যা প্রকাশের একক। $i^2 = -1$। কাল্পনিক বলার কারণ হল বাস্তবে এমন কোনো সংখ্যা নেই যার বর্গমূল -1 (মাইনাস 1)। অন্য বাস্তব সংখ্যার মতই অবশ্য -1 এর বর্গমূল দুটি যথা i এবং -i।

শূন্য (০):

0 কে বলা হয় যোগজ অভেদ (Additive Identity)। এটা হল 'নাথিং' বা 'কিছুই না' এর গাণিতিক প্রকাশ।
এটা নিয়ে একটি কৌতুক হল, এক বন্ধু ০ আবিষ্কার করে বলল, "আমি এটা আবিষ্কার করলাম"
২য় বন্ধুঃ কী আবিষ্কার করলে, হে?
১ম বন্ধুঃ কিছুই না!
২য় বন্ধুঃ !!!!!!!!

একে যোগজ অভেদ বলার কারণ, ধরুণ, আপনি ক্রমান্বয়ে অনেক কিছু যোগ করবেন। যখন আপনি কিছুই যোগ করেননি তখন আপনার যোগফল ০। ভাবছেন এ আর এমন কি বিশেষত্ব! হ্যাঁ, বিশেষত্বই বটে। একটু পর বলছি। যাই হোক, একে প্রতিকের বদলে সংখ্যা হিসেবে প্রথম আবিষ্কার করেন ভারতীয়রা।

এক (1) :

১ হল গুণজ অভেদ (Multiplicative Identity)। এর বিশেষত্বের কারণ হল, ধরুন আমরা ক্রমান্বয়ে অনেকগুলো সংখ্যা গুণ করবো। তাহলে যখন একটা গুণও করিনি তখন গুণফল ১। কারণ আদি গুণফল ১ না ধরে ০ ধরলে পরবর্তীতে সব গুণফল হয়ে যাবে ০।  এটা হল এর সাথে যোগজ অভেদের তারতম্য। আর এ কারণেই লজিক্যালি 0! (0 Factorial) এর মান ১ ধরা হয়। অর্থাৎ এখনও কিছুই গুণ করা হয়নি, মানে হাতে মাত্র ১ আছে। কিন্তু 0 Factorial এর মান ০ হলে ফ্যাক্টোরিয়াল নীতিই অস্তিত্ত্ব হারাত, কারণ যে কোনো কিছুর ফ্যাক্টোরিয়াল হত ০।

এ জন্যই যোগ-বিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু নেই মানে ০ আর গুণ ভাগের ক্ষেত্রে কিছু নেই মানে ১।
এখন, দেখা যাচ্ছে, এই পাঁচ সংখ্যার আসলেই বিশেষত্ব আছে।

সম্পর্কঃ
$e ^{i \pi} + 1 = 0$

ছোটবেলায় সরল অঙ্কের সরল ফলাফল (এই অর্থে আসলেই সরল!) পেয়ে আমরা কিছুটা হতাশ হতাম বৈকি, এটা তাহলে তার চে' বড় হতাশা! এক দিকে গোবেচারা শূন্য আর অপরদিকে কেমন কিম্ভুতকিমাকার একটি আকৃতি!
এখন চলুন, এটার প্রমাণ দেখে ফেলি-

eiπ = -1 বা $e ^{i \pi} + 1 = 0$ হয় কেন- এই প্রশ্নটির আসল রূপ হচ্ছে আসলে eiπ দ্বারা কী বোঝায়। অর্থাৎ কোনো সংখ্যার ঘাত কাল্পনিক হওয়ার মানে কী? এটা বোঝা গেলেই সমীকরণটিও সরল অঙ্কের মতই সরল হয়ে যাবে।

ডি ময়ভারের সূত্র থেকে আমরা জানতে পারি, সকল x এর জন্য,
 (IMAGE)
এই সমীকরণ থেকে এক্সপোনেনশিয়াল ফাংশনের সাথে ত্রিকোণমিতিক ফাংশনের সম্পর্ক ধরা পড়ে।
তাহলে, x এর বদলে π বসিয়ে আমরা পাই,  (IMAGE)  । কারণ, cosπ এর মান -1 এবং sinπ এর মান 0।

এখন কাজ হচ্ছে প্রমাণ করা যে কেন  (IMAGE) , যেটা থেকে বোঝা যায় e এর ঘাত একটি কাল্পনিক সংখ্যা হবার মানে কী।

সূচকের মৌলিক ধারণা মতে কোনো একটি সংখ্যার ঘাত কাল্পনিক সংখ্যা হওয়া অর্থহীন যেখানে  (IMAGE) মানে বোঝায় a কে b সংখ্যক বার নিজের সাথে গুণ করা। b ধনাত্মক হলেই কেবল সূচকের এই ধারণা মানানসই হয়। নচেৎ কোন সংখ্যাকে নিজের সাথে i বার (কাল্পনিক সংখ্যক বার) গুণ করার অর্থ কী?

অবশ্য সূচকের মূল সংজ্ঞায় b এর মান ভগ্নাংশ কিংবা ঋণাত্মক সংখ্যাও হতে পারে না। কিন্তু এর পরেও কোন সংখ্যার ঘাত ঋণাত্মক বা ভগ্নাংশ হলে আমরা তার থেকে অর্থ বের করে নিতে পারি ।
যেমন, যেহেতু ১/৩ হচ্ছে সেই সংখ্যা যাকে ৩ দ্বারা গুণ করলে ১ পাওয়া যায় সেহেতু a^(1/3) কে অর্থপূর্ণ বলা যাবে এই বলে যে এর ঘাত 3 পর্যন্ত উঠালে a^1 তথা a পাওয়া যাবে।
ফলে, a^(1/3) হচ্ছে a এর ঘনমূল (Cube Root)। একইভাবে ঘাত নেগেটিভ হলে আমরা তারও অর্থ বের করতে পারি। যেমন, a^(-2) মানে 1/(a^2)।

তাহলে একটুখানি ঝামেলা থাকলেও ঘাত ঋণাত্মক বা ভগ্নাংশ হলে আমরা মুশকিলে পড়ি না।
দেখা যাক, কাল্পনিক সংখ্যা যে মুশকিলে ফেলে দেয় তার আসান কোথায়।
তাহলে, আমাদেরকে সূচককে বা তার ধর্মকে এমনভাবে প্রকাশ করতে হবে যাতে এর ঘাত জটিল সংখ্যা বানানো যায়।
এখন, e^x এর ধারাভিত্তিক অসীম সম্প্রসারণ হল-  (IMAGE)
যেখানে n! (n factorial) মানে হল ১,....n পর্যন্ত গুণফল। ধারাটি আসে ক্যালকুলাসের টেইলর ধারা থেকে। এখন এই অসীম সমষ্টি জটিল সংখ্যার (যাতে কাল্পনিক সংখ্যা বিদ্যমান থাকে) ক্ষেত্রেও অর্থবহ হয়। আমরা যদি x এর বদলে ix বসাই,
 তাহলে,  (IMAGE)
এখন টেইলর সিরিজ আরো বলে যে  (IMAGE)  হল cosx এর অসীম সমষ্টি এবং  (IMAGE)  হল sinx এর অসীম সমষ্টি। অতএব,  (IMAGE)
সমীকরণটিকে সাজিয়ে লেখা যায় e +1= 0।
ফলে, অনেক জটিল সম্পর্কের সহজ রূপ আমরা পেয়ে গেলাম।সরল ফলাফল!!


তথ্য সূত্রঃ
[১]https://cs.uwaterloo.ca/~shallit/euler.html
[২]http://scidiv.bellevuecollege.edu/Math/Euler.html
[৩]https://www.math.toronto.edu/mathnet/questionCorner/epii.html
[৪]http://arstechnica.com/civis/viewtopic.php?f=24&t=998695
[৫] https://brilliant.org/discussions/thread/the-discovery-of-the-number-e-2/
Category: articles

Wednesday, September 14, 2016

প্যারাডক্স কাকে বলে মনে আছে? যারা ভুলে গেছেন তাদের মনে করিয়ে দেই। সক্রেটিস একবার বলেছিলেন,
‘আমি জানি যে, আমি কিছুই জানি না।‘ 
কথাটায় ভুল আছে। কারণ তিনি যে কিছুই জানেন না- এটা তো অন্তত জানেন। তাহলে কিছুই জানেন না- কথাটা সঠিক নয়। পরে অবশ্য তিনি তাঁর কথা সংশোধন করে বলেছিলেন, 'আমি শুধু এটুকু জানি যে, আমি কিছু জানি না'।

এমন স্ববিরোধী ঘটনা বা বক্তব্যকেই প্যারাডক্স বলে। তবে আবার দেখতে স্ববিরোধী কিন্তু বাস্তবে সঠিক- এমন জিনিসও প্যারাডক্সের কাতারে পড়ে। আজকে আবারও এমন একটি প্যারাডক্স আমরা দেখব।

গ্রিক দার্শনিক জেনো মনে করতেন গতি নিছকই একটি ভ্রম (Illusion), বাস্তব কিছু নয় । মূলত তাঁর অগ্রজ দার্শনিক পারমিনাইডস প্রথম বাস্তবতার দুটি বিপরীত ধারণা তুলে ধরেন। জেনো সাহেব ঐ নীতির সমর্থনেই অনেকগুলো প্যারাডক্স তৈরি করেন। কারণ ভিন্নপন্থীরা পারমিনাইডসের মতবাদের বিরুদ্ধেও তাই করেছিলেন।

জেনোর প্যারাডক্সসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো "একিলিজ ও কচ্ছপ প্যারাডক্স"। আড়াই হাজার বছর আগে জেনোর প্যারাডক্স নিয়ে লেখা বইয়ের এটাই সবচেয়ে সহজে বোঝা যায় যদিও ব্যাখ্যা করা সবচেয়ে দুঃসাধ্য।

প্যারাডক্সটি যা বলতে চায় তা হলঃ

ট্রোজান যুদ্ধের গতিমান বীর একিলিজ (Achilles) কচ্ছপের সাথে রেসে লেগেছেন। কচ্ছপ একিলিজের একটু সামনে। গ্রিক বীর কচ্ছপের চেয়ে অবশ্যই দ্রুতগামী। একটু পেছন থেকে ধাওয়া করে তাকে কচ্ছপকে ওভারটেক করতে হবে। কাজটি সহজই মনে হয়। কিন্তু একটা সমস্যা দাঁড়াল। অতিক্রম করতে হলে আগে বীরকে কচ্ছপ পর্যন্ত পৌঁছতে হবে। একিলিজ যতক্ষণে নিজের ও কচ্ছপের মধ্যকার আদি দূরত্ব পাড়ি দিয়েছেন ততক্ষণে কচ্ছপটি মাঝে আরেকটি গ্যাপ বানিয়ে ফেলেছে। নতুন গ্যাপটি আগের চেয়ে কম, কিন্তু প্রাণিটাকে ধরতে হলে বীরকে সেই দূরত্ব পার হতে হবে। তিনি সেটা করলেনও।

কিন্তু হায়! ততক্ষণে ছোট্ট এই জীবটি আরেকটি নতুন গ্যাপ তৈরি করে ফেলেছে। ফলাফল হল, একিলিজ কখোনোই কচ্ছপকে ধরতে পারবেন না, যত দ্রুতই তিনি গ্যাপ ফিল-আপ করেন না কেন কারণ, কচ্ছপটা বরাবরই নতুন গ্যাপ বানাতে থাকবে। হ্যাঁ, সেগুলো আগেরগুলোর তুলনায় ক্ষুদ্রতর হবে বটে!

একিলিজ ও কচ্ছপের দৌড় প্রতিযোগিতা 

জেনোর যুক্তিকে ভুল বলে উড়িয়ে দেওয়া বেশ লোভনীয়। তবে সাধারণত সেটা করা হয় অলসতা বা অস্বস্তি থেকে। অলসতা- কারণ এটা সমাধান না করেই আমরা সব সময় ভাবতে থাকি, এইতো সমাধান হয়ে গেছে। অস্বস্তির অনুভূতির কারণ হল এতো প্রাচীন এই দার্শনিকের কাছে যুক্তির মার খাওয়া।

এই প্যারাডক্সের উত্তর দিতে গিয়ে অনেকেই বলেন যেহেতু একিলিজের বেগ বেশি তাই তিনি কচ্ছপকে পার হয়ে যাবেন। কিন্তু জেনোতো ধরেই নিয়েছেন আকিলিজের বেগ বেশি। তাই এই বক্তব্য উত্তর হতে পারে না। বেগ বেশি বলেই তো গ্যাপ ক্রমাগত কমছে, কিন্তু কখোনোই জিরো হচ্ছে না।
দর্শন ও গণিতের বেশির ভাগ প্রফেসরদের মতে শুধু এই প্যারাডক্সটি নিয়েই একটা বই লিখে ফেলা যেতে পারে। অনেকে লিখেছেনও।

চলুন, সংক্ষেপে প্যারাডক্সটি ভাঙ্গার চেষ্টা করি।

জেনো প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন পরিবর্তন ও গতি বাস্তব কিছু নয়। তাঁর অ্যারো প্যারাডক্সও সেই উদ্দেশ্যেই বানানো।
ইলিনয়েস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিক হাগেট বলেন জেনোর মত ছিলো,
"গতিকে অস্বীকার করা পাগলামী, তবে মেনে নেওয়া আরো কষ্টকর"।
জগৎ সম্পর্কে আমাদের ধারণা ও বাস্তবতার মধ্যে যে ফারাক প্যারাডক্সটি তাই তুলে ধরে। Enlightening Symbols বইয়ের লেখক ও মার্লবোরো কলেজের গণিতের এমিরিটাস প্রফেসর জোসেফ মাজুরের মতে "প্যারাডক্সটি হচ্ছে এমন যা স্থান, কাল ও গতি সম্পর্কে আমাদেরকে ভুলভাবে চিন্তা করায়"।

তাহলে আমাদের চিন্তার গলদ কোথায়?
গতি বাস্তব এবং সম্ভব, অবশ্যই। আর দ্রুতগামী দৌড়বিদ অবশ্যই কচ্ছপকে হারাবেন। সমস্যাটির সাথে আমাদের ইনফিনিটি বা অসীমতার ধারণার একটি যোগসূত্র আছে। একিলিজের কাজ অসম্ভব মনে হয় কারণ তাকে সসীম সময়ে অসীম সংখ্যক কাজ (গ্যাপ পূরণ) করতে হবে। কিন্তু সব অসীমের প্রকৃতি এক নয়।

ধারাদের মধ্যে অভিসারী (Convergent) ও অপসারী (Divergent) নামক দুই ধরনের ধারা রয়েছে। স্পষ্টতম অপসারী ধারা হল ১+২+৩+... এই ধারার উত্তর অসীম। একিলিজকে এই ধারার ধরণের পথ পাড়ি দিতে হলে কাজটি অসম্ভব হয়ে যেত। অর্থ্যাৎ কচ্ছপ যদি ক্রমান্বয়ে বৃহত্তর দূরত্ব তৈরি করত তখন সেটা অপসারী ধারা হত।

এবার এই ধারাটির কথা ভাবুন $\frac{১}{২}+\frac{১}{৪}+\frac{১}{৮}$+...। অসীম পর্যন্ত চললেও সিরিজটা অভিসারী, যার যোগফল হয় ১। অসীম সংখ্যক পদের যোগফল যে সসীম সংখ্যা হতে পারে এই ধারাটা তার একটি প্রমাণ, যা চমক ভাই কুমড়া থিওরি দিয়ে প্রমাণ করিয়েছিলেন। একিলিজ যদি দ্রুত দৌড়ে ক্রমান্বয়ে দূরত্ব কমান তাহলে যে ধারাটা তৈরি হয় তাও অনেকটা এই ধারাটার মত। ফলে, একিলিজ পরিমাপযোগ্য সসীম সময়ে অসীম ধারা সৃষ্টিকারী দূরত্ব পার হতে পারবেন।

ধারার এই ধারণা জেনোর আরেকটি বিভ্রান্তিকর প্যারাডক্সের জবাব দেয়। সেটা হল দ্বিবিভাজন বা Dichotomy Paradox। মনে করুন, আপনার সামনে একটি বাস আছে, যা আপনি দৌড় দিয়ে ধরতে চাও। মনে করুন, তার দূরত্ব ক। ক দূরত্বে পৌঁছতে প্রথমে আপনাকে $\frac{ক}{২}$ দূরত্বে যেতে হবে। $\frac{ক}{২}$ দুরত্বে যেতে হলে আগে $\frac{ক}{৪}$, $\frac{ক}{৪}$ যেতে $\frac{ক}{৮}$... ইত্যাদি। অর্থ্যাৎ সিকুয়েন্সটা দাঁড়ায় এমন -

{..., $\frac{১}{১৬}, \frac{১}{৮}, \frac{১}{৪}, \frac{১}{২}, ১$}

অর্থ্যাৎ জেনোর মতে যেহেতু বাসটা ধরতে অসীম সংখ্যক পথ পাড়ি দিতে হবে, সেহেতু বাস আর কোন দিনই ধরা হবে না। কিন্তু বেচারা জেনো! অসীম এই ধারা সমষ্টি সসীম। ফলে বাস ধরার স্বপ্নও অধরা থাকবে না।

এ তো আমরা অসীমকে সসীম বানালাম। কিন্তু আরেকভাবে চিন্তা করলে সব সসীমই তো আসলে অসীম। যেমন ধরুন, পরীক্ষার সময় ১ ঘন্টা। এখন, চাইলে এই ঘন্টাকে অসীম সংখ্যক ভাগে বিভক্ত করা যায়। যে কোন রাশিকেই তো ক্ষুদ্রতর এককে হিসাব করতে থাকলে তা ইনফিনিটির দিকে যেতে থাকে।

তবে, প্যারডক্সের রক্ষণভাগ এখোনও ধসেনই। Halfway to Zero বইয়ের লেখক বেঞ্জামিন অ্যালেন এর মতে গাণিতিকভাবে এটা সম্ভব যে একটা দ্রুততর বস্তু একটি কম বেগসম্পন্ন বস্তুকে চিরকাল তাড়া করবে, কিন্তু ধরতে পারবে না, যদি সঠিক প্রক্রিয়ায় দুটোরই বেগ কমতে থাকে।

এরও উত্তর মিলবে দুই ধরণের ধারার পার্থক্যের মধ্যে। $\frac{১}{২}+\frac{১}{৩}+\frac{১}{৪}+\frac{১}{৫}$+... ধারাটিকে অভিসারী মনে হলেও এটা আসলে ডাইভারজেন্ট বা অপসারী (Divergent) । একিলিজ যদি এই ধারার মতো করে কচ্ছপকে তাড়া করে বেড়ায় তবে সত্যি হার মানতে হবে। প্যারাডক্সে তেমন কোনো শর্ত নেই। তাই এবার প্যারাডক্স ঠিকই গোল খেল!

তবে, এই উত্তরে হয়তো গ্রিক দার্শনিকগণ সন্তুষ্ট হতেন না। কারণ, তাদের অনেকেই মনে করতেন চোখে দেখা বাস্তবতার চেয়ে তাদের যুক্তির ক্ষমতা বেশি।

(লেখাটি ইতোপূর্বে পাই জিরো টু ইনফিনিটি ও ব্যাপন ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে)  
Category: articles

Saturday, September 10, 2016

ঋণাত্মক সম্ভাবনা!

গণিত ও পরিসংখ্যান সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা রাখেন-এমন অধিকাংশ মানুষই কথাটি শুনলে চোখ কপালে তুলে ফেলবেন। ভেংচি কাটবেন। বক্তার মানসিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন। কারণ তারা জানেন, সম্ভাবনা (Probability) কোনো ঘটনা ঘটার আনুকূল্য প্রকাশ করে। যেমন, কারো কাছে ১০ টি বল আছে। ৫টি বল লাল হলে না দেখে একটি বল তুললে সেটি লাল হবার সম্ভাবনা $\frac{৫}{১০}$। একটিও লাল না হলে লাল বল পাওয়ার সম্ভাবনা $\frac{০}{১০}$ বা শূন্য। সবগুলো লাল হলে সম্ভাবনা হবে $\frac{১০}{১০}$, মানে এক।

অতএব, প্রচলিত ধারণা অনুসারে সম্ভাবনার মান হতে পারে ০ থেকে ১ পর্যন্ত। ০ হলে বোঝা যাবে, ঘটনাটি একেবারেই ঘটবে না। আর ১ হওয়ার মানে, সেটি ঘটবেই। নিশ্চিত। তাহলে সম্ভাবনা আবার ঋণাত্মক হয় কী করে? প্রথাবিরোধী ও অযোৗক্তি চিন্তা!


গণিতের ইতিহাসে কিন্তু এমন বিপরীত চিন্তার প্রাচুর্য লক্ষণীয়। আলেকজান্দ্রিয়ার গ্রিক গণিতবিদ ডায়াফ্যান্টাস বলেছিলেন, 4x + 20 = 0 সমীকরণের যে ঋণাত্মক সমাধান আসে সেটি অযৌক্তিক। ১৭০০ সালেও ইউরোপে ঋণাত্মক সংখ্যাকে অপ্রয়োজনীয় মনে করা হতো। তবে চীন ও ভারতে খ্রিস্টের জন্মের কয়েক শতকের মধ্যেই ঋণাত্মক সংখ্যার প্রচলন ঘটেছিল। ভারতীয়দের সাথে সম্পর্কের সুবাদে ইসলামী আমলের গণিতবিদরাও এর সাথে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু শূন্যের মতোই ঋণাত্মক সংখ্যাও ইউরোপে সাধুবাধ পায় অনেক পরে।
এমনকি ১৭৫৯ সালে ইংরেজ গণিতবিদ ফ্র্যান্সিস ম্যাসারস বলেছিলেন,
ঋণাত্মক সংখ্যা একটি সমীকরণের চেহারাকেই কলুষিত করে দেয়। এগুলো একবারেই অর্থহীন।
আঠারো শতকেও সমীকরণের ঋণাত্মক সমাধানকে হিসাবের বাইরে ফেলে দেওয়া হতো। অয়লারের মতো গণিতবিদও এদেরকে অর্থহীন মনে করতেন। শেষ পর্যন্ত লিবনিজ সাহেব এই সংখ্যাদেরকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ব্যবহার করা শুরু করেন।

৪ থেকে ৩ বিয়োগ দিলে ১ হয়। জানি। কিন্তু ৩ থেকে ৪ বিয়োগ দিলে? এর অর্থ তো এমন যে, আমার কাছে তিনটি গরু আছে। সেখান থেকে চারটি গরু আমি কাউকে দিয়ে দিলাম। এটা কীভাবে সম্ভব? ধরুন আমার কাছে ৫০ টাকা আছে। এখান থেকে কি আমি কাউকে ১০০ টাকা দান করতে পারি? হ্যাঁ। তার জন্যে আমাকে প্রথমে ৫০ টাকা ধার করতে হবে। তার মানে ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা কাউকে দিয়ে দিলে আমার কাছে মাইনাস ৫০ টাকা থাকবে। মানে আমি ৫০ টাকা দেনা থাকব। এভাবেই ঋণাত্মক সংখ্যা বাস্তব হিসাব-নিকাশের অনিবার্য অংশ হয়ে যায়। সহজ করে দেয় গণিতের কাজ।

ঋণাত্মক সংখ্যার মতোই বাধার সম্মুখীন হয়েছিল ভগ্নাংশ ও ’কাল্পনিক’ সংখ্যাও। বর্তমানে এগুলো সুপ্রতিষ্ঠিত গাণিতক সংখ্যা। কোয়ান্টাম মেকানিক্স নামের পদার্থবিদ্যার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাগটির শুরুতেই দেখা যায় 'কাল্পনিক' সংখ্যার পদচারণা।

একইভাবে সমূহ সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে ঋণাত্মক সম্ভাবনা নিয়েও। ১৯৪২ সালে নোবেল বিজয়ী তাত্ত্বিক পদার্থবিদ পল ডিরাক একটি পেপার প্রকাশ করেন। এতে তুলে ধরেন ঋণাত্মক সম্ভাবনার কথা। তিনি বলেন,
ঋণাত্মক সম্ভাবনাকে উদ্ভট ভাবা ঠিক নয়। 
১৯৮৭ সালে নোবেলজয়ী আরেক পদার্থবিদ রিচার্ড ফাইনম্যানও এ বিষয়ে একটি পেপার প্রকাশ করেন। তিনি এখানে দেখান, ঋণাত্মক সম্ভাবনার চিন্তা মোটেও আজগুবি নয়। এই ধারণা বরং প্রয়োগ করা যায় পদার্থবিজ্ঞানের অনেকগুলো ক্ষেত্রে।

তাঁর মতে হিসাবের সুবিদার্থে আমরা যেভাবে ঋণাত্মক সংখ্যার ব্যবহার করি, সেই একক যুক্তিতে ব্যবহার করা চলে ঋণাত্মক সম্ভাবনাও। ধরুন, কারো কাছে ১০টি আপেল আছে। এখান থেকে তিনি ১০টি কাউকে দিলেন, আর ৮টি নিলেন কারো কাছ থেকে। ঋণাত্মক সংখ্যা দিয়ে একে সহজেই হিসাব করা যায়। ৫-১০ = -৫ এবং -৫+৮ = ৩। শেষ পর্যন্ত সন্তোষজনকভাবে ধনাত্মক সংখ্যাই পাওয়া গেল। যদিও মাঝখানে ব্যবহার করা হয়েছে 'অযৌক্তিক' ঋণাত্মক সংখ্যা।

এবার মনে করুন, তিনটি তল বিশিষ্ট একটি গুটিতে যথাক্রমে ১,২ ও ৩ লেখা আছে। আরও ধরুন, গুটিগুলোকে দুইটি ভিন্ন শর্ত মেনে নিক্ষেপ করা যাবে। শর্ত A ও শর্ত B। শর্ত দুটির ক্ষেত্রে সম্ভাবনার মান হবে আলাদা। ধরুন, শর্ত A-এর ক্ষেত্রে ১ পড়ার সম্ভাবনা $P_{1A}$ = ০.৩, ২ পড়ার সম্ভাবনা $P_{2A}$= ০.৬ এবং ৩ পড়ার সম্ভাবনা  $P_{3A}$ = ০.১। শর্ত B-এর ক্ষেত্রে সম্ভাবনাগুলো যথাক্রমে $P_{1B}$ =০.১, $P_{2B}$= ০.৪ ও $P_{3B}$ = ০.৫। তার মানে, বিষয়টা এ রকম:

অবস্থা শর্ত A শর্ত B
০১ ০.৩ ০.১
০২ ০.৬ ০.৪
০৩ ০.১ ০.৫
মোট

এবার ধরুন গুটিটিকে মোট ১০ বার নিক্ষেপ করা হলো। ৭ বার নিক্ষেপ করা হলো শর্ত A অনুসারে। বাকি ৩ বার শর্ত B অনুসারে। তার মানে A-এর সম্ভাবনা P$_A$= ০.৭ ও B-এর সম্ভাবনা P$_B$= ০.৩। মনে রাখতে হবে, একটি সিস্টেমের সবগুলো ঘটনা ঘটার মোট সম্ভাবনা এক (১) হবে। এখন গুটি নিক্ষেপ করে সম্ভাবনার তত্ত্ব অনুসারে ১ পাওয়ার সম্ভাবনা হবে ০.৭ × ০.৩ + ০.৩ ×০.১ =০.২৪।

তার মানে, a যদি শর্ত হয়, আর P$_{ia}$ যদি হয় শর্তাধীন সম্ভাবনা, তাহলে a শর্তের জন্যে i এর সম্ভাবনা হবে
P$_i$ = $\sum_aP_{ia}.P_a$
এখানে P$_a$ হলো a শর্ত পূরণ হবার সম্ভাবনা। P$_{ia}$ মানে হলো i ও a ঘটার যৌথ সম্ভাবনা। বুঝতে অসুবিধা হলে টেবিল থেকে মিলিয়ে নিন। যেহেতু প্রতিটি শর্তের জন্যে কিছু না কিছু ঘটবেই, তাই $\sum_iP_{ia}$ =1 হবে।
যদি কোনো একটি শর্ত অবশ্যই পূরণ হয়, তাহলে যদি $\sum_aP_a$---(১)
হয় তাহলে $\sum_iP_i$ হবে।

(১) অনুসারে, আমরা কোনো না কোনো ফলাফল পাবই।

এবার ধরুন, কিছু শর্তাধীন সম্ভাবনা ঋণাত্মক হলো। ঋণাত্মক সংখ্যার মতোই ফাইনাল ফলকে অযৌক্তিক না বানিয়ে আমরা মাঝখানে এর ব্যবহার করতে পারি কি না দেখা যাক। এবার টেবিলটা এ রকমঃ
অবস্থাশর্ত Aশর্ত B
০১০.৩-০.৪
০২০.৬১.২
০৩০.১০.২
মোট

টেবিলটা এমনভাবে করা হয়েছে যাতে (১) অনুসারে $P_{1B}$+ $P_{2B}$+ $P_{3B}$=1  হয়। এবার তাহলে ১ পাওয়ার সম্ভাবনা হবে $P_1$ = ০.৭×০.৩+০.৩× (-০.৪) =০.৯। স্বাভাবিক ফল। $P_{2B}$ ও ১ এর বেশি (১.২) হয়েছে। এ ধারণার সাথে ঋণাত্মক সম্ভাবনার কোনো পার্থক্য নেই। এটি হলো ঘটনাটি না ঘটার ঋণাত্মক সম্ভাবনা।

একইভাবে হিসাব করে ২ ঘটার সম্ভাবনা পাওয়া যাবে $P_2$=০.৭×০.৬+০.৩×১.২ =০.৭৮।

৩ ঘটার সম্ভাবনা হবে $P_3$=০.১৩। এদের যোগফল হয় ১, যা স্বাভাবিক ফল। আবার শর্তগুলোর নিজেদের অথবা ১, ২ বা ৩ ঘটার সম্ভাবনাও ঋণাত্মক হতে পারে। তবুও ফাইনাল রেজাল্ট যৌক্তিক হওয়া সম্ভব।

তাহলে ঋণাত্মক সম্ভাবনাকে আমরা ফাইনাল রেজাল্টের জন্যে স্বাভাবিক হিসেবে মেনে না নিলেও অন্তত হিসাবের সুবিদার্থে মাঝখানে ব্যবহার করতেই পারি। এতে সম্ভাবনা তত্ত্বের কোনো বিধানের বিরুদ্ধে যাওয়া হয় না। ফাইনম্যান তাঁর পেপারে ঋণাত্মক সম্ভাবনার কিছু ব্যবহারিক উদাহরণও দেখিয়েছিলেন।

ইদানিং এ বিষয়ে নিয়মিত পেপার আসছে। মার্ক বারগিন ২০১০ সালে এক পেপারে এর প্রয়োগ দেখাতে গিয়ে একটি সুন্দর উদাহরণ দিয়েছেন। মনে করুন, আমি কোনো বানান ভুল করি না। তাহলে এ লেখায় 'কারন' ('কারণ' এর স্থলে) শব্দটি থাকার সম্ভাবনা কত? প্রচলিত সম্ভাবনা সূত্র অনুসারে উত্তর হবে ০। কিন্তু অনেক সময় টাইপিং-এ ভুল হয়। অতএব আমরা বলতে পারি, লেখায় 'কারন' শব্দটি থাকার সম্ভাবনা হবে (-০.১)। পরে এটি ঠিক করা হলে আর কোনো ভুল বানান থাকবে না। অর্থাৎ, বলা যায়, টাইপিং ভুলের আগে সম্ভাবনা ঋণাত্মক ছিল। সব ভুল দূর করার পরে সম্ভাবনা শূন্য হলো।

১৯৩২ সালে আরেক নোবেল বিজয়ী ইউজিন উইগনারও ঋণাত্মক সম্ভাবনার দেখা পান। ১৯৪৫ সালে ইংরেজ পরিসংখ্যানবিদ  মরিস বার্টলেট দেখান, ঋণাত্মক সম্ভাবনার মধ্যে কোনো গাণিতিক বা যৌক্তিক অসঙ্গতি নেই। ২০১০ সালে এস্পেন হউগ দেখান যে গাণিতকি অর্থনীতিতেও এই ধারণা কাজে লাগানো সম্ভব।

সূত্রঃ
1. http://cds.cern.ch/record/154856/files/pre-27827.pdf
2. https://betterexplained.com/articles/a-visual-intuitive-guide-to-imaginary-numbers/
3. https://en.wikipedia.org/wiki/Negative_number#First_usage_of_negative_numbers

Category: articles

Wednesday, August 31, 2016

এখন আগস্ট মাস। এই মাসের ৫ তারিখে নরওয়ের ফিনয় শহরে জন্ম নেন ক্ষণজন্মা ও অসামান্য প্রতিভাধারী গণিতবিদ নিলস হেনরিক অ্যাবেল। তাঁর নামানুসারে গণিতের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার Abel Prize দেওয়া হয়। অ্যাবেল নিয়ে জানার আগে চলুন নোবেল প্রাইজ নিয়ে একটু জেনে নিই।

নোবেল পুরস্কার সম্পর্কে কিছু কথাঃ



১৮৮৮ সাল। আলফ্রেড নোবেল খবরের কাগজ পড়ছেন। একটি শিরোনামে তাঁর চোখ আটকে গেল। "মৃত্যু বণিকের মৃত্যু" (The Merchant of Death is Dead")। এখানে লেখা হয় যে আলফ্রেড নোবেল আর বেঁচে নেই। না, খবরটি তাঁর আত্মা নয়, তিনিই সশরীরেই পড়ছিলেন। তবে মারা তিনি যাননি, গিয়েছিলেন তাঁর ভাই লুডভিগ নোবেল । খবরে ভুল হয়েছিল। তবে এই ঘটনাটি নোবেলকে তাঁর সম্পর্কে মানুষের মৃত্যু-পরবর্তী অনুভূতির ব্যাপারে সতর্ক করে দিলো। তিনি তাঁর উইল বদলে দিলেন। সবাইকে অবাক করে দিয়ে তিনি তাঁর ৯৪% অর্থ নোবেল প্রাইজ পুরস্কার প্রদানের জন্যে ছেড়ে দিলেন, যা দেওয়া হবে এমন ব্যক্তিদের যাঁরা পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, শান্তি, চিকিৎসা ও সাহিত্যে "মানবতার সর্বোত্তম কল্যাণ" সাধন করবে। (অর্থনীতি পরে অন্য দাতার দানের প্রেক্ষিতে ১৯৬৮ সালে যুক্ত করা হয়)

নোবেল পুরস্কারের প্রতীক 

নোবেল সাহেবের এত বিশাল দান বিশ্বাস করতে সময় লাগায় ১৮৯৫ এ করা উইল অনুমোদন পেতে ১৮৯৭ সাল হয়ে যায়। তাঁর আবিষ্কৃত ডিনামাইটের ক্ষতিকর দিক থাকায় তিনি তার প্রায়শ্চিত্ত করতে চেয়েছিলেন, চেয়েছিলেন মানবতার কল্যানসাধনকারীরা প্রাইজ পাক।

এখন বিতর্ক হলে পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়নসহ সব শাস্রের ধারক বাহকরাই নিজেদেরকে ভোট দেবেন। কিন্তু তাঁদের কেউ কি বলতে পারবেন, তাঁদের অবদান একচেটিয়া? এটা ঠিক জ্ঞান বিজ্ঞানের শাখাগুলো পরস্পর নির্ভরশীল। কিন্তু কোন সেই শাখা যা বাকি সবার চালিকাশক্তি? অবশ্যই গণিত। আমি গণিত ভালোবাসি বলে বলছি তা নয়, এটাই তো বাস্তবতা।

গণিতের নোবেলঃ

পুরস্কার পান আর না পান, গণিতবিদরা মানবতার প্রতি তাঁদের সেরা অবদান চিরকাল অব্যাহত রাখবেন। তবে তাঁদের অবদানের স্বীকৃতি দিতে ২০০১ সাল থেকে নরওয়ে সরকার চালু করেছে নোবেলের কাছাকাছি নামের অ্যাবেল পুরস্কার, গণিতবিদ নিলস হেনরিক অ্যাবেলের( ১৮০২-১৮২৯) নামে। গণিতে নোবেল না থাকায় এটাকেই বলা হয় 'গণিতের নোবেল'। পুরস্কারের অর্থমূল্য নরওয়ের টাকায় ৬০ লাখ ক্রোনার ( প্রায় ১০ লাখ ইউএস ডলার) বা প্রায় ৮ কোটি বাংলাদেশি টাকা।

অ্যাবেল প্রাইজের প্রতীক

অবিচ্ছিন্ন প্রতিসাম্য তত্বের প্রবক্তা গণিতবিদ ম্যারিয়াস সোফাস লী (১৮৪২-১৮৯৯) ১৮৮৯ সালে তাঁর মৃত্যুর কিছু আগে সর্বপ্রথম এই পুরস্কারের প্রস্তাব দেন, এটা জানতে পেরে যে আলফ্রেড নোবেলের পুরস্কার প্রদানের পরিকল্পনায় গণিতের স্থান নেই। তবে ১৯০২ সালেও রাজা ২য় অস্কার পুরস্কারটি শুরু করতে চেয়ে সুইডেন ও নরওয়ের ভাঙনের হুজুগে তা আর করতে পারেননি। আর ১৮৯৯ সালে লী এর মৃত্যুও উৎসাহে বিরতির কারণ।

২০০১ সালের মে মাসে ভাবনাটির পুনরুজ্জীবনের পর একটি ওয়ার্কিং গ্রুপের মাধ্যমে নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। ঐ বছরেরই আগস্টে সরকার ঘোষণা করে যে ২০০২ থেকে পুরস্কার প্রদান শুরু হবে, যে সালটি হল অ্যাবেলের জন্মের দুইশতম বছর। অবশ্য ২০০৩ সাল থেকে এটি প্রদান করা হচ্ছে।

যেভাবে নির্বাচিত করা হয়ঃ

পাঁচজন বিশ্বসেরা গনিতজ্ঞের বাছাইয়ের পর নরওয়েজিয়ান অ্যাকাডেমি অভ সায়েন্স অ্যান্ড লেটারস প্রতি বছরের মার্চে অ্যাবেল পুরস্কার প্রাপ্তের নাম ঘোষণা করে। International Mathematical Union এর অন্যতম নির্বাহী সদস্য ও বীজগাণিতিক জ্যামিতির গবেষক, নরওয়েরই গণিতজ্ঞ র‍্যাগনি পিয়েনে হচ্ছেন কমিটির প্রধান। International Mathematical Union ও the European Mathematical Society অ্যাবেল কমিটির সদস্যদের মনোনিত করে। পুরস্কারের জন্য মনোনিত ব্যক্তিকে জীবিত হতে হবে। তবে মনোনিত হবার পর মারা গেলে মরণোত্তর পুরস্কার পাবেন।

কে ছিলেন এই অ্যাবেলঃ

গণিতবিদ হেনরিক অ্যাবেল
১৮০২ সালে জন্ম নেওয়া এই গণিতবিদের রয়েছে অনেকগুলো ক্ষেত্রে অগ্রবর্তী অবদান। তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান হল General Quintic Equation এর মূল বের করতে পারার অক্ষমতার একটি পূর্ণাংগ প্রমাণ পেশ। এটি তাঁর সময়ের অন্যতম বড় সমস্যা ছিল, যা ২৫০ ধরে জিইয়ে ছিল।

উপবৃত্তাকার ও অ্যাবেলিয়ান ফাংশনের জনক এই গণিতবিদের আয়ুষ্কাল ছিল খুবই স্বল্প, মাত্র ২৬ বছর। তাঁর সম্পর্কে ফরাসী গণিতবিদ চার্লস হারমাইটের উক্তি, "অ্যাবেল গণিতবিদদের জন্যে যা রেখে গেছেন তা তাদের ৫০০ বছর ব্যাস্ত রাখার জন্যে যথেষ্ট।" বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর হিসেবে নিয়োগ পাবার কয় দিন আগে তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন।

১৬ বছর বয়সে তিনি দ্বিপদী উপপাদ্যের একটি সার্বজনীন প্রমাণ পেশ করেন, যা অয়লারের ফলাফলের চেয়ে ভালো ঠেকে, কারণ অয়লারে প্রমাণ খাটতো শুধু মূলদ সংখ্যার জন্য।

২০১৪ সালের অ্যাবেল বিজয়ীঃ


এ বছর অ্যাবেল পকেটে ভরেছেন ইয়াকুভ গ্রিগোরেভিচ সিনাই। অবদান Dynamical Systems, Ergodic theory ও  Mathematical Physics এ মৌলিক অবদান।  এছাড়াও তিনি গণিতের নেমার্স প্রাইজ ও উলফ প্রাইজও জিতেছেন।

অন্যান্য বছর অ্যাবেল প্রাপ্তদের পরিচয় ও অবদানঃ
২০০৩ সাল থেকে নিয়মিত অ্যাবেল প্রদান করা হচ্ছে। প্রথম বছর পুরস্কার পান ফ্রান্সের নাগরিক জন পিয়েরে সেরে। তিনি টপোলজি, বীজগাণিতিক জ্যামিতি ও সংখ্যাতত্ত্ব সহ গণিতের বিভিন্ন শাখার আকৃতি দানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

২০০৪ সালে এ পুরস্কার পান যৌথভাবে দু'জন গণিতজ্ঞ- ব্রিটিশ নাগরিক মাইকেল অ্যাটিয়াহ ও আমেরিকান নাগরিক ইসাডোর সিঙ্গের। তাঁরা দু'জন মিলে ইন্ডেক্স উপপাদ্য আবিষ্কার ও প্রমাণ করেন। এর মাধ্যমে টপোলজি, জ্যামিতি ও গাণিতিক বিশ্লেষণ -শাখাগুলো একীভূত হয় এবং গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের সাথে একটি সেতু-বন্ধন তৈরি হয়।
আমেরিকান গণিতবিদ পিটার ল্যাক্স পান ২০০৫ সালের অ্যাবেল। তাঁর অবদান ছিল আংশিক অন্তরক সমীকরণের তত্ত্ব, প্রয়োগ ও সমাধান প্রদান।

Harmonic analysis ও smooth dynamical systems এর তত্ত্বের উপর পূর্ণাংগ অবদান রেখে ২০০৬ সালে এই পুরস্কার পকেটে ভরেন সুইডিশ গণিতবিদ লেনার্ট কার্লসন।

সম্ভাব্যতা তত্ত্বে মৌলিক অবদানের জন্য ২০০৭ সালের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় ভারতীয় আমেরিকান গণিতবিদ শ্রীনিবসা ভরাধনের হাতে।

বীজগণিত ও গ্রুপ থিওরিতে যৌথ ভূমিকা রেখে জন থম্পসন ও জ্যাক টিটস ২০০৮ সালে ভাগাভাগি করেন এই পুরস্কার।

২০০৯ সালে এটি ঘরে তোলেন রুশ আমেরিকান মিখাইল গ্রমভ। তাঁর অবদান হল জ্যামিতির বৈপ্লবিক উন্নয়ন।

আমেরিকান গণিতজ্ঞ জন টেইট সংখ্যাতত্ত্বের উপর ব্যাপক ও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব তৈরি করতে সক্ষম হওয়ায় ২০১০ সালের পুরস্কার নিজের করে নেন। পরের বছরও তাঁর স্বদেশী জন মিলনর টপোলজি, বীজগণিত ও জ্যামিতিতে ভূমিকা রেখে নিজের পক্ষে নেন ২০১১ সালকে।

এন্দ্রে সেমেরদি লাভ করেন ২০১২ সালের অ্যাবেল। হাঙ্গেরীয় আমেরিকান এই গণিতবিদের অবদান ছিল বিচ্ছিন্ন গণিত ও তাত্ত্বিক কম্পিউটার বিজ্ঞানে।

বেলজিয়ান গণিতবিদ পিয়েরে বীজগাণিতিক জ্যামিতিতে মূখ্য ভূমিকা ও সংখ্যা তত্ত্বে প্রভাব ফেলে ২০১৩ সালে জিতে নেন গণিতের সবচেয়ে সম্মানজনক এই প্রাপ্তি।
Category: articles

Friday, July 15, 2016

আজ ১৫ জুলাই। ১৯২৪ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন বিখ্যাত ব্রিটিশ পরিসংখ্যানবিদ ডেভিড কক্স।

পরিসংখ্যান ও প্রায়োগিক সম্ভাবনার বহু ক্ষেত্রে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। কোপলে পদক ও পরিসংখ্যানের Guy Medal সহ অনেকগুলো পুরস্কারের মালিক তিনি।

পরিসংখ্যানবিদঃ ডেভিড কক্স 
১৯২৪ সালের ১৫ জুলাই তারিখে ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে কক্স ( (David Cox) জন্মগ্রহণ করেন। গণিত নিয়ে পড়াশুনা করেন সেন্ট জোন্স কলেজে। ১৯৪৯ সালে লিডস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। এ সময় আরেক পরিসংখ্যানবিদ হেনরি ড্যানিয়েলস ছিলেন তাঁর অন্যতম উপদেষ্টা।

তিনি ১৯৪৪ সাল থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত রয়েল বিমান সংস্থায় কাজ করেন। ১৯৪৬ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত ছিলেন লিডসের পশম শিল্প গবেষণা সংস্থায় এবং ১৯৫০ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান পরীক্ষাগারে নিযুক্ত ছিলেন। ১৯৫৬ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত তিনি লন্ডনের বার্কবেক কলেজের রিডার ও পরে অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন।

১৯৬৬ সালে তিনি লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের পরিসংখ্যানের প্রধানের পদ গ্রহণ করেন। পরে তিনি গনিত বিভাগের প্রধান হন। ১৯৮৮ সালে তিনি নাফিল্ড কলেজের ওয়ার্ডেন এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এর পরিসংখ্যান বিভাগের সদস্য হন। ১৯৯৪ সালে এসব পদ থেকে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর গ্রহণ করেন।

পরিসংখ্যান ও প্রায়োগিক সম্ভাবনার ক্ষেত্রে তাঁর বহু অবদানের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হল Proportional hazards model। সারভাইভাল বিষয়ক উপাত্ত বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে এই মডেল ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন, আয়ুষ্কাল বিষয়ক এক মেডিকেল গবেষণায় দেখা যায় যে রোগীর বয়স, খাদ্য অথবা নির্দিষ্ট রসায়নিক দ্রব্যের প্রভাব ইত্যাদি বিভিন্ন তথ্যের সাথে এর সম্পর্ক থাকতে পারে। এছাড়াও তাঁর নামানুসারেই কক্স প্রসেসের নামকরণ করা হয়েছে।

বিভিন্ন জায়গা থেকে কক্স অসংখ্য সম্মানসূচক ডক্টরেট পেয়েছিলেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ১৯৮৭ সালে পাওয়া হেরিওট- ওয়াট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া ডিগ্রি। তাকে রয়েল পরিসংখ্যান সোসাইটির রূপার এবং সোনার “Guy Medels” পদকে ভুষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালে তিনি লন্ডনের রয়েল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন। ১৯৮৫ সালে দ্বিতীয় রাণী এলিজাবেথ তাকে নাইট পদে ভূষিত করেন।

২০০০ সালে তিনি ব্রিটিশ একাডেমির সম্মানসূচক ফেলো হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি আমেরিকার ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স এর একজন বৈদেশিক সহযোগী এবং রয়েল ড্যানিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স অ্যান্ড লেটারস এর একজন বৈদেশিক সদস্য।

১৯৯০ সালে তিনি ক্যান্সার গবেষণা বিষয়ক 'Proportional hazards regression model' এর উন্নতি সাধনের জন্য kettering prize এবং স্বর্ণ পদক পেয়েছিলেন। ২০১০ সালে পরিসংখ্যানের তত্ত্বীয় এবং প্রয়োগিক বিষয়ে তার অসামান্য অবদানের জন্য তিনি রয়েল সোসাইটির কোপলে পদকে ভূষিত হয়েছিলেন।

বর্তমানে বিখ্যাত এমন বহু তরুণ গবেষককে তিনি তত্ত্বাবধান, সহযোগিতা এবং অনুপ্রেরণা দান করেছিলেন। দায়িত্ব পালন করেছেন রয়েল পরিসংখ্যান সোসাইটির বারনোউলি সোসাইটি এবং আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান ইন্সটিটিউট এর সভাপতি হিসেবে।

তিনি একা বা যৌথভাবে ৩০০টি বই বা গবেষণাপত্র লিখেছেন। ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তিনি পরিসংখ্যান বিষয়ক বৈজ্ঞানিক জার্নাল Biometrika এর সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন।

তাঁর উল্লেখযোগ্য কিছু বই হল Planning of experimentsRenewal TheoryAnalysis of binary dataThe theory of design of experimentsPrinciples of Applied Statistics ইত্যাদি।

১৯৪৭ সালে তিনি জয়েস ড্রুমন্ড এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের চারটি সন্তান এবং দুইটি নাতি- নাতনি আছে। তিনি এখনও বেঁচে আছেন।

সূত্রঃ
১। https://en.m.wikipedia.org/wiki/David_Cox_(statistician)
২। https://en.wikipedia.org/wiki/Henry_Daniels
Category: articles

Sunday, June 12, 2016

১ এর পরে ৫টি শুন্য দিলে এক লাখ, ৬টি দিলে ১০ লাখ বা ১ মিলিয়ন হয়। ৯টি শুন্য দিলে হয় ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি। কিন্তু আরো বেশি দিলে? সেটাই জেনে নিই, চলুন। উল্লেখ্য, আগে সংখ্যা পদ্ধতির ব্রিটিশ ও আমেরিকান নিয়ম ভিন্ন ছিল। যেমন, আগে বিলিয়ন বলতে ব্রিটিশরা বুঝত 1012। কিন্তু, বর্তমানে ওরাও আমেরিকানদের পথে চলছে।

১ সেপ্টিলিয়ন = ১ এর পরে ২৪টি শুন্য 

১ মিলিয়ন = 10। অর্থ্যাৎ, ১ এর পরে ৬ খানা শুন্য।
১ বিলিয়ন = 109
১ ট্রিলিয়ন =1012
১ কোয়াড্রিলিয়ন = 1015
১ কুইন্টিলিয়ন = 1018
১ সেক্সটিলিয়ন = 1021
১ সেপ্টিলিয়ন = 1024
১ অক্টিলিয়ন = 1027
১ ননিলিয়ন = 1030
১ ডেসিলিয়ন = 1033
১ উনডেসিলিয়ন = 1036
---------------------
১ ভিজিন্টিলিয়ন = 1063
১ সেন্টিলিয়ন = 10303
১ গুগোল (Googol) = 10100
১ গুগোলপ্লেক্স (Googolplex) = 10Googol (1010100)


সূত্রঃ
১। ইংরেজি উইকিপিডিয়াঃ বড় বড় সংখ্যাদের নাম

Category: articles

Saturday, April 16, 2016

আজ ১৬ এপ্রিল। ১৮৯৪ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন পোলিশ গণিত ও পরিসংখ্যানবিদ জার্জি নেইম্যান।


নেইম্যানই সর্বপ্রথম পরিসংখ্যানের হাইপোথিসিস টেস্টিং (test of hypothesis) এর জগতে কনফিডেন্স ইন্টারভাল(confidence interval) এর ধারণা প্রবর্তন করেন। এছাড়াও তিনি ইগন পিয়ারসনের (কার্ল পিয়ারসনের ছেলে) সাথে যৌথভাবে নাল হাইপোথিসিস (null hypothesis) প্রস্তাব করেন।

১৮৯৪ সালে রুশ সাম্রাজ্যের এক পোলিশ ক্যাথলিক খ্রিষ্টান পরিবারে তাঁর জন্ম। বাবা- মায়ের চার সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। ছোটবেলায় গির্জায় যাজকের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর পরিবার ছিল খুব উচ্চবংশীয়, পূর্বপুরুষদের অনেকেই সামরিক বাহিনীতে নাম করেছিলেন।

আট বছর বয়স পর্যন্ত পড়াশোনা করেন বাসায় গৃহশিক্ষিকার কাছে। এর পর ভর্তি হন স্থানীয় জিমনেশিয়ামে। এ অল্প বয়সেই তিনি পাঁচ পাঁচটি ভাষায় কথা বলতে শিখেন। এগুলো হল পোলিশ, ইউক্রেনীয়, রুশ, ফরাসী ও জার্মান। ১৯০৯ সালে তিনি জিমনেশিয়ামের গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেন। ১৯১২ সালে ভর্তি হন ইউক্রেনের খারকোভ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানে তিনি রুশ গণিত ও সম্ভাবনাবিদ (probabilist) সের্গেই বার্নস্টাইন এর কাছে পড়ার সুযোগ পান। এখানে থাকা অবস্থায়ই পরিমাপ তত্ত্ব (measure theory) ও সমাকলনের (integration) প্রতি তাঁর তীব্র আগ্রহ তৈরি হয়।

১৯২১ সালে তিনি তাঁর দেশ পোল্যান্ডে ফিরে আসেন। ১৯২৪ সালে ওয়ারস' বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে। এটি পোল্যান্ডের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয়। তাঁর থিসিসের বিষয় ছিল 'কৃষি ক্ষেত্রে সম্ভাবনা তত্ত্বের প্রয়োগ'।

তিনি ফেলোশিপ নিয়ে লন্ডন ও প্যারিসে কয়েক বছর সময় কাটান। এখানে এসে গাণিতিক পরিসংখ্যানের জনক কার্ল পিয়ারসন ও এমিলি বোরেলের কাছে পরিসংখ্যান শিখেন। পোল্যান্ড ফিরে এসে একটি বায়োমেট্রিক ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করেন।

পরীক্ষণ ও পরিসংখ্যান নিয়ে অনেকগুলো বই লেখেন তিনি। বর্তমানে আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA) যে প্রক্রিয়ায় ওষুধের গুণাগুণ পরীক্ষা করে সে প্রক্রিয়ার উদ্ভাবক তিনিই।

১৯২৩ সালে তিনি র‍্যান্ডোমাইজড এক্সপেরিমেন্ট এর প্রস্তাব পেশ করেন এবং এ নিয়ে গবেষণা গবেষণা চালিয়ে যান। বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়। এর ফলে পরীক্ষণের নির্ভরযোগ্যতা বাড়ে। ১৯৩৪ সালে তিনি রয়েল স্ট্যাটিস্টিক্যাল সোসাইটিতে (Royal Statistical Society) একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্র জমা দেন। এতে স্তরীভূত নমুনায়ন (stratified sampling) ও উদ্দেশ্যমূলক বাছাই (Purposive Selection) সম্পর্কে আলোচনা ছিল। এই গবেষণাপত্রই আধুনিক বৈজ্ঞানিক নমুনায়নের (sampling) ভিত্তি তৈরি করে।

১৯৩৭ সালে তিনি কনফিডেন্স ইন্টারভাল সম্পর্কিত তাঁর গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করেন। তাঁর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান হল নেইম্যান- পিয়ারসন লেমা, যা হাইপোথিসিস টেস্টিং এর মূল ভিত্তি।

১৯৩৮ সালে চলে আসেন আমেরিকার বার্কলেতে। এখানেই কাটে তাঁর বাকি জীবন। তাঁর অধীনে ৩৭ জন ছাত্র পিএইচডি সম্পন্ন করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি রয়েল স্ট্যাটিস্টিক্যাল সোসাইটির গাই মেডাল লাভ করেন। এর তিন বছর পর পান আমেরিকার ন্যাশনাল সায়েন্স মেডাল। এছাড়াও আরো বেশ কিছু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন তিনি।

তিনি ১৯৮১ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে পরলোক গমন করেন।

সূত্রঃ
১। https://en.wikipedia.org/wiki/Jerzy_Neyman
২। https://en.wikipedia.org/wiki/Confidence_interval
৩। https://en.wikipedia.org/wiki/Guy_Medal
৪। http://www-history.mcs.st-and.ac.uk/Biographies/Neyman.html
Category: articles

Monday, March 14, 2016

প্রকৃতি যে সুকৌশলে গণিত মেনে চলে তার আরেকটি উদাহরণ হলো প্রকৃতিতে পলিহেড্রনের ছড়াছড়ি। এই কথার প্রমাণ দেখার আগে চলুন চোখ ডুব দিয়ে নিই পলিহেড্রন শব্দটির গভীরে।

প্রাচীন গ্রিক থেকে আগত polús শব্দটি থেকে আগমণ ঘটেছে পলি (Poly) শব্দের । অর্থ হচ্ছে , 'অনেক', 'বহু" ইত্যাদি। আর শব্দটির অপর অংশ hedronও এসেছে প্রাচীন গ্রিক থেকেই। ἕδρα বা hédra থেকে আগত এই শব্দটির অর্থ 'ভিত্তি', 'তল', 'মুখ' ইত্যাদি। অর্থ্যাৎ, সহজ কথায়, যে জ্যামিতিক গঠনের অনেকগুলো তল থাকে সেটাই পলিহেড্রন। আর, এজন্যেই এর বাংলা নামটিও হয়েছে যথার্থই- বহুতলক।  'তল' থাকে তিন বা তার অধিক মাত্রার বস্তুর। ফলে, পলিহেড্রন অবশ্যই অন্তত ত্রিমাত্রিক হবে। দ্বিমাত্রিক গঠন, যেমন বর্গ বা আয়ত কোনোভাবেই পলিহেড্রন হবে না, কারণ এদের কোন তল নেই।

বহুতলককে দ্বিমাত্রিক বানিয়ে ফেললে আমরা পাবো বহুভূজ (Polygon)। বহুভূজদের নামের শেষে থাকে 'ভূজ' বা 'gon' কথাটি। অন্য দিকে বহুতলকদের নামের শেষে থাকে (সাধারণত) 'তলক' বা ' 'hedron' শব্দটি। তবে, কিছু পরিচিত বহুতলকের নামের শেষে হেড্রন বা তলক থাকে না, যেমন ঘনক (কিউব), পিরামিড, প্রিজম ইত্যাদি। এদের সংখ্যা অল্প।
তলের সংখ্যা অনুসারে বহুতলকদের বিভিন্ন রূপভেদ পাওয়া যেতে পারে। যেমন, টেট্রাহেড্রন বা চতুষ্কতলকে চারটি ত্রিভুজাকার তল থাকে যাদের তিনটি একই সাধারণ শীর্ষে মিলিত হয়।

চিত্রঃ টেট্রাহেড্রন

অবশ্য 'টেট্রা' শব্দ শুনে মনে হতে পারে, ত্রিভুজ দিয়ে কেন তল বানানো হয়েছে, চতুর্ভুজ দিয়ে কেন নয়? আসলে মাত্র চারটি তলের সমন্বয়ে গঠিত বহুতলক শুধু ত্রিভুজকে তল বানিয়েই বানানো যায়। আর কোনোভাবেই মাত্র চারটি তল দিয়ে বহুতলক হয় না।

আটটি তলক নিয়ে গঠিত হয় অষ্টতলক বা অক্টাহেড্রন (octahedron)। ডোডেকাহেড্রনে থাকে ১২ টি তল। আবার আইকোসাহেড্রন (Icosahedron)-এ তল থাকে বিশটি।  বহুতলকদের সংখ্যাও কিন্তু বহুই।

প্রকৃতিতে দেখা মেলে বিভিন চিত্র-বিচিত্র বহতলকের। কোনো কোনোটাতো আবার আকার নেয় প্রচলিত তারকার মতো। চতুষতলক, ঘনক ও অষ্টলতকের প্রত্যেককেই পাওয়া যায় স্ফটিকরূপে। যেমন ক্যালসিয়াম, টাইটেনিয়াম, অক্সিজেন ও সিলিকনের যৌগ টাইটেনাইট বহুতলক স্ফটিকের বেশ ভালো একটি উদাহরণ।

চিত্রঃ টাইটেনাইট

ছবিতে টাইটেনিয়ামের অষ্টতলক, সিলিকার চতুষতলক এবং ক্যালসিয়ামের বিচ্ছিন্ন অণু দেখা যাচ্ছে।
আবার বিরাইল ((Be3Al2Si6O18) যৌগে দেখা যায় চতুষতলকেরা (Tetrahedron) মিলে তৈরি করেছে ষড়কোণী বলয়। 
চিত্রঃ বিরাইল যৌগ

কার্বনের নতুন আবিষ্কৃত অণু ফুলারিনেরও বহুতলকের সাথে দহরম মহরম সম্পর্ক।

কার্বনের বৃহৎ অণু ফুলারিন


রসায়নেই শুধু নয়, বহুতলকের আধিপত্য রয়েছে জীববিজ্ঞানেও। বিংশ শতকের শুরুর দিকে আর্নেস্ট হেকেল রেডিওলেরিয়া পর্বের বেশ কিছু প্রাণির কঙ্কালের গঠনের বর্ণনা দেন। মূলত এদের গঠন ছিল সুষম বহুতলকের মত। অন্যতম একটি উদাহরণ হচ্ছে Circogonia icosahedra প্রাণির দেহ কাঠামো।


অন্য দিকে, আমাদের অতি পরিচিত কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত ভাইরাস এইচআইভির গঠনও বহুতলাকার।
মৌমাছিদের মৌচাকের গঠনের জন্য আমরা বাহবা দেই ষড়ভূজকে। প্রকৃতপক্ষে মৌচাকে ষড়ভূজাকার মুখ থাকে। কিন্তু মৌচাকের অভ্যন্তরীণ চ্যাম্বারগুলো হয় রম্বিক ডোডেকাহেড্রন আকারের। একই ধরণের আকৃতি দেখা যায় ডালিমের অভ্যন্তরের কোষের মধ্যে, বিশেষ করে যখন কোষগুলো বড় হতে থাকে।


ভীমরুলের কামড় খেয়েছেন কখনো? কামড় খেতে ভীষণ খারাপ লাগলেও ওদের বাসা কিন্তু দেখতে দারুণ।  আকৃতিটা হচ্ছে ষড়ভূজী প্রিজমের মতো। এটাও আরেক প্রকার বহুতলকই।


জীবজগতে আরো বহু বহুতলক থাকলেও আমরা আপাতত চোখ বুলাই অন্য দিকে।
প্রাচীন কালে পিথাগোরাসের শিষ্যরা মনে করতেন গ্রহদের কক্ষপথ মেনে চলে বহুতলাকার আকৃতি। সপ্তদশ শতাব্দীতে জোহানেস কেপলার আরেক বিজ্ঞানী টাইকো ব্রাহের গ্রহদের গতি সংক্রান্ত সংগৃহীত উপাত্ত থেকে পিথাগোরীয়দের মতটি প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেন। তিনি গ্রহদের কক্ষপথের আকারের সাথে বহুতলকদের আকারের মিল বের করতে সচেষ্ট হন। বলাইবাহুল্য, সে চেষ্টা সফল হয়নি। কিন্তু আজকে আমরা যে গ্রহদের গতি সম্পর্কিত কেপলারের সূত্রগুলো এত সুবিন্যস্তভাবে পাচ্ছি, তার পেছনে অবদান আছে বহুতলকদের পেছনে গবেষণার। অবশ্য সেই সময় মাত্র ৫টি গ্রহের সাথে মানুষের পরিচয় ছিল বলেই প্রাথমিক অনুমানটি তৈরি হতে পেরেছিল। পরবর্তীতে ইউরেনাস ও নেপচুন আবিষ্কৃত হবার পরে এই ক্ষেত্রে পিথাগোরীয় মতবাদটির কবর রচিত হয়ে যায়।

স্থাপত্যজগতেও বহুতলকদের রয়েছে ভালো কদর। ২০০৮ সালের সামার অলিম্পিক উপলক্ষে বেইজিং-এ নির্মিত ওয়াটার কিউবও একটি বহুতলক। অবশ্য আসলে কিউব (ঘনক) নয় বরং কিউবয়েড (Cuboid)। তাতে কি, এটাতো বহুতলকই থাকছে!

সূত্রঃ
[১] http://en.wikipedia.org/wiki/Polyhedron
[২] Polyhedra_in_Nature
Category: articles